Health Blog

কুক্কুট রন্ধনপ্রনালী

খাবার দাবার নিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা আমার পুরনো অভ্যাস। এক মুরগির মাংসই আমি একেকবার একেকভাবে রাঁধিয়া থাকি, যখন যেরূপ মন চায়।
তো ক’দিন যাবৎ সন্তানদিগের পিতা আমার মুরগি রান্না খাইয়া যারপরনাই ভীষণ খুশি! একদা বাজার হইতে লইয়া আসিয়া কহিলেন, “সেবারের মতো কুক্কুট রাঁধিও।” কহিলাম, “কেমন করিয়া রাঁধিব? কেবাব মাসালা শেষ হইয়া গিয়াছে যে।” তিনি কহিলেন, “এক্ষুণি অর্ডার দিয়া দিতেছি হে গিন্নি! আর কী কী লাগিবে কহিয়া দাও।”

কর্তা মুঠোফোনখানা মুঠোয় লইয়া সরোবরের এ্যাপ হইতে তৎক্ষনাৎ একখানা অর্ডার প্লেস করিলেন।

অতঃপর, যাবতীয় মসলাপাতি দোরগোড়ায় আসিয়া পৌছাইল। খাইবার পর অঙ্গুলি লেহন করিতে করিতে উৎফুল্ল হইয়া তিনি কহিলেন, “রেসিপিটা দিও গো! সরোবরে পাঠাইব। এহেন উপাদেয় খাদ্য একাই উপভোগ করি কী করিয়া কও? তাহারাও অবহিত হউক, কেবাব মাসালা দিয়া কেবাব ছাড়াও কত সাধারণ রান্না অসাধারণে পরিণত করা সম্ভব।”

এদিকে আমি পড়িলাম মহা বিপদে। রেসিপি লিখি কী করিয়া? আমি কি আর হিসেব করিয়া উপকরণসমূহ দিই নাকি! হাতের কাছে যাহা পাই তাহাই একটু আধটু ঢালিয়া, মাখাইয়া চুলায় চাপাইয়া দিই৷ কেবাব মাসালাই তো এর আসল উপকরণ। এছাড়া এই রান্না যাহা দিয়াই রাঁধিব, উপাদেয় হইবেই৷ ইহা একখানা “ইচ্ছামতো” রেসিপি।

যাহা হউক, রেসিপি যেহেতু দিতেই হইবে; এইবারে যেমন করিয়া রাঁধিলাম তাহারই রেসিপি দিতেছি। শুরুতেই চুপে চুপে কহিয়া লই, উপকরণের নামসমূহ দেখিয়া কেহ ভয় পাহিবেন না যেন! ইহারা আরবি নাম, সরোবরের পণ্যসমূহ এইসব নামেই বিক্রয় হইয়া থাকে। বুঝিয়া লইবেন আশা করিতেছি।

উপকরণসমূহ

মুরগি : এক-দেড় কেজি
খারদাল : ১ টেবিল চামচ
কামুন : ১ চা চামচ
তমাতুম : ১ টেবিল চামচ
পেঁয়াজ বাটা : ২ টেবিল চামচ
শাহী গারাম মাসালা : ১ চা চামচ
আদা-রসুন বাটা : ২ টেবিল চামচ
কেবাব মাসালা : ২ টেবিল চামচ
চিনি : ১ চা চামচ
লবণ : স্বাদমতো

প্রস্তুত প্রণালী

১. মুরগিখানা ছোট ছোট অংশে কাটিয়া ভালো করিয়া ধুইয়া উপরের সব উপকরণ দিয়া মাখাইয়া মেরিনেট করিয়া রাখিলাম মিনিট তিরিশেক। আমি যেই কড়াইখানায় রান্না চাপাই, তাহাতেই মেরিনেট করিয়া রাখি। এতে অতিরিক্ত পাত্র ধুইবার ঝামেলা হইতে মুক্ত হওয়া যায়।
২. আধ ঘণ্টা পর বিসমিল্লাহ কহিয়া কড়াইখানা চুলায় মাঝারি আঁচে চাপাইয়া দিলাম। ঢাকনা দিয়া ঢাকিয়া দিলাম। কিছুক্ষণের মাঝেই সুঘ্রাণ বাহির হইতে লাগিল। ওই যে পাড়ার মোড়ের ফাস্টফুডের দোকানখানায় গ্রিল-চিকেনের যে ঘ্রাণ আসে না, একেবারে সেই ঘ্রাণটাই! ইহাই কেবাব মাসালার কামাল।
(আপনারা রাঁধিবার সময় অন্তর্জালে বিচরণ করিতে করিতে ভুলিয়া যাইবেন না যেন, চুলায় কিন্তু কুক্কুট রন্ধন চলিতেছে, সময়মতো খেয়াল না করিলে পুড়িয়া যাইবার সমূহ সম্ভাবনা রইয়াছে। আমার একবার পুড়িয়া গিয়াছিল, তবে সরোবরের এই বিশেষ মশলা দিয়া রাঁধিলে কিঞ্চিত পোড়া পোড়া খাইতেও মন্দ লাগে না।)
৩. এরপর ঢাকনা তুলিয়া বেশ করিয়া নাড়িয়া-চাড়িয়া-কষাইয়া রাঁধিলাম। রঙখানা গা হইলে এক পেয়ালা গরম জল ঢালিয়া পুনরায় ঢাকনা দিয়া রাখিলাম।
৪. সবশেষে পরিমাণমতো ঝোল রাখিয়া, লবন চাঁখিয়া চুলা হইতে নামাইয়া সার্ভিং ডিশখানায় নিয়া গরম গরম পরিবেশন করিলাম।
এই রেসিপিতে একটা মজার ব্যাপার হইল – উপকরণসমূহ ইচ্ছেমতো কমাইয়া-বাড়াইয়া দেওয়া যায়। কেবাব মাসালা আর লবণ ছাড়া মশলার কোনো একটা উপকরণ বাদ দিলেও খাইতে মন্দ হইবে না। পেঁয়াজের দাম বাড়িয়া যাওয়াতে কর্তা পেঁয়াজ কিনিলেন না যেবার, সেবার তো পেঁয়াজ ছাড়াই রাঁধিয়াছিলাম। আরেকবার আদা-রসুন বাটা ছিল না বলিয়া তাহাও দিলাম না। আর একবার তো খারদাল (তেল) দিতেই ভুলিয়া গিয়াছিলাম। কখনো ফ্রিজে পড়িয়া থাকা বাসি দুধ ঢালিয়া ঝোল করি, কখনো কিসমিস কিংবা আলুবোখারা দিই, মেরিনেটের সময় কখনো খানিকটা সয়া সস দিয়া লই। সবই ইচ্ছেমতো। আপনিও এভাবে রাঁধিয়া বাড়ির সকলের প্রিয় রাঁধুনির খেতাব অর্জন করিয়া লন না কেন?

“আসল ছবি তুলিতে ভুলিয়া গিয়াছিলাম যাহার ফলে এখানে প্রতিকী ছবি দেওয়া হইলো।”