Honey Blog

খাঁটি মধু বুঝব কীভাবে?

সরোবর মধু বিক্রি করে। মৌমাছির কাছ থেকে বোতলে ভরা পর্যন্ত পুরো কাজটা আমাদের চোখের সামনে হয়। মধুতে ভেজাল মেশানোর প্রশ্নই আসে না। এরপরেও মাঝে মাঝে আমাদের শুনতে হয় মধুটা নাকি খাঁটি নয়।

কীভাবে জানলেন?

গুগল আর ইউটিউবের যুগে সবাই সব কিছু জানে। আপনি যদি ইউটিউবে গিয়ে honey purity test লিখে সার্চ দেন তাহলে খাটি মধু পরীক্ষার অসংখ্য ভিডিও দেখতে পাবেন। এরকম একটা ভিডিওতে তিন উপায়ে মধুর পিউরিটি পরীক্ষা করা হয়েছেঃ

 ১। পানিতে ঢেলে দিলে যদি সাথে সাথে পানির তলায় জমে তাহলে আসল।

২। আগুন ধরিয়ে দিলে যদি পুড়ে যায় তাহলে আসল।

৩। বুড়া আঙুলের মাথায় দিলে যদি একটা একটা বিন্দুর মতো স্থির হয়ে থাকে তাহলে সেটা আসল।

এ ছাড়াও আরো কিছু সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ‘বৈজ্ঞানিক’ পদ্ধতির কথা আমরা শুনতে পাইঃ

 ১। পিঁপড়া মধু খেলে সেটা আসল।

২। মধুতে পিপড়া না ধরলে সেটা আসল।

৩। ফ্রিজে রেখে দিলে জমে না গেলে সেটা আসল।

৪। শীতকালে জমে গেলে তবেই সেটা আসল।

এ ধরণের প্রশ্ন পেতে পেতে বাধ্য হয়ে আমরা দুজন মানুষের সাথে যোগাযোগ করি – ড. যাকারি হুয়াং এবং ড. লুস এলফেইন।

15170850_854417474694421_9190980360098417976_n

আমরা উপরোল্লখিত সবগুলো পদ্ধতির কথা তুলে ধরে জানতে চাই – এভাবে কি খাঁটি মধু বোঝা যায়?

তাঁদের দুজনেরই উত্তর ছিল, যায় না।

15171077_854416858027816_2188050329841172391_n

কেন যায় না?

কারণ, মধুর সান্দ্রতা নির্ভর করে মধুর আর্দ্রতা ওপরে। যে মধুতে পানি বেশি সেটা কম ঘন। যে মধুতে পানি কম সেটা অনেক ঘন। মরু এলাকার ফুলের মধু আর বাওড় এলাকার ফুলের মধুতে অনেক তফাত থাকে। সুন্দরবনের একদম খাঁটি মধু অনেক পাতলা হয়, আবার সরিষা ফুলের সাথে অনেক ভেজাল মেশানোর পরেও সেটাকে বেশ ঘন মনে হবে।

মধুতে সামান্য মোম মিশিয়ে দিলেই মধুটা সটান পানির তলায় চলে যাবে, জমে থাকবে। আগুন ধরিয়ে দিলে আগুন জ্বলবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই মোমটা যদি মধুতে না মিশিয়ে চিনির শিরাতে মিশিয়ে দেন, একই ফল পাবেন। আমরা অফিসে চিনির শিরা ঘন করে বানিয়ে পরীক্ষা করে দেখিয়েছি চিনির শিরা বেশি ঘন হলে সোজা তলে চলে যায়, দ্রবীভূত হয় না।

সত্যি কথা বলতে কী, খাঁটি মধু বানানোর চাপে অনেক ভালো মধু উৎপাদকরাও মধুকে প্রক্রিয়াজাত করতে বাধ্য হন। প্রক্রিয়াজাত মানে মৌমাছির তৈরি মধুকে উত্তপ্ত করে পানির পরিমাণ কমিয়ে ফেলা। দুঃখজনক হলেও, এ কাজটা করতে গিয়ে মধুর বেশকিছু পুষ্টিমান হারিয়ে যেতে পারে। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি মানুষের মাঝে একটা সচেতনতাবোধ তৈরি করতে যে মৌমাছিদের থেকে সরাসরি পাওয়া প্রাকৃতিক মধুই সবচেয়ে ভালো, হোক সেটার দাম বেশি, হোক সেটা একটু কম ঘন।

শুরুর প্রশ্নে ফিরে যাই – ঘরে বসে খাঁটি মধু চিনব কীভাবে?

কোনো উপায় নেই। শুধু আমাদের কাছে না, পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীদের কাছেও নেই।

অনলাইন হাতুড়েরা যেসব দেখাচ্ছে সেগুলো বাকওয়াজ ছাড়া অন্য কিছু নয়।

তবে প্রশ্ন যদি হয় খাঁটি মধু পাবেন কীভাবে?

তার উত্তর দিতে পারিঃ

১। আপনি গ্রামের দিকে থাকলে বা গ্রামের সাথে ভালো যোগাযোগ থাকলে, নিজের মধু নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে সংগ্রহ করুন।

২। এটা সম্ভব না হলে, কোনো বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। কারো বিশ্বস্ততায় সন্দেহ হলে তার সাথে মধুর খামার পর্যন্ত যেতে পারেন।

আমাদের সরোবরের সাথে যদি কেউ মৌমাছির খামার দেখতে চান, স্বাগতম।

ফিচার ইমেজঃ Image by Mel Gama from Pixabay

One thought on “খাঁটি মধু বুঝব কীভাবে?

  1. Sahadat Hossain says:

    Apnader sathe khamare jawar procedure ki?

Comments are closed.