নাতী-নাতনীর অনুরোধে ঢাকায় বেড়াতে এসেছেন খান সাহেব ও তার স্ত্রী সুফিয়া। ব্যাগ গোছানোর সময় খান সাহেব পইপই করে সবকিছুর কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি যাতে কিছুই বাদ না পড়ে।
বাস থেকে নেমে ছাতা মাথায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিএনজি/ট্যাক্সির জন্য। এর মাঝেই কোথা থেকে এক গাড়ি সাঁই করে চলে গেল সামনে দিয়ে। কাদায় মাখামাখি হয়ে বিশ্রী অবস্থা!
এমনিতেই দীর্ঘ যাত্রা তার উপর আবার নোংরা ভেজা কাপড়। মেজাজটাই তিরিক্ষি হয়ে গেল খান সাহেবের। রাগে গজগজ করছেন সেই তখন থেকেই।
সুফিয়া বেগম ভয়ে অস্থির। কে জানে এই রাগ ক ঘন্টা স্থায়ী হয়। যাই হোক, তারা কাদায় মাখামাখি হয়েই ছেলের বাসায় পৌঁছলেন। ছেলে, ছেলের বউ, নাতী-নাতনী সবাই খুশি। এই দিকে তখনও খান সাহেব রাগে গজগজ করছিলেন।
বৃষ্টির দিন তার উপর ক্লান্ত শরীর তাই ফ্রেশ হয়ে ঘরেই নাতী-নাতনীর সাথে নামাজ আদায় করে নিলেন। নাতী-নাতনীর সঙ্গ পেয়েই তার রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। তা দেখে সুফিয়া বেগম কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
বিপত্তি বাঁধল অন্য জায়গায়। সুফিয়া ঘি প্যাক করতে ভুলে গিয়েছেন, এখন কী করবেন ভাবছিলেন! খান সাহেবের আবার প্রতিবেলায় গরম ভাতে এক চামচ ঘি ছড়িয়ে না খেলে পেটের শান্তি হয় না। সুফিয়া ঘাবড়ে গিয়ে ছেলের বউকে সব জানালেন, তিনি এও বললেন- তোমার শ্বশুর ঘিয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি।
ঘটনা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে ছেলের বউ বলল – একদম চিন্তা করবেন না মা। ঘরে খাঁটি ঘি আছে। বাবা একদমই বুঝতে পারবেন না। সুফিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও মনটা খচখচ করেই যাচ্ছিল তার। বাজারের কেনা ঘি, কেমন না কেমন হবে!
যাই হোক, খাওয়ার টেবিলে সবাই একে একে খেতে বসতে শুরু করেছে। খান সাহেব যাতে না বুঝতে পারেন তাই একটি বাটিতে খানিকটা ঘি উঠিয়ে তার নাতনীর হাতে পাঠালেন। এরপর খাওয়ার শুরুতে তিনি সামান্য ঘি পাতে তুলে নিলেন।
খাওয়ার টেবিলে গল্পের আসরও জমেছিল যেন। খান সাহেব ছেলের বউকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বুঝলে মা খাঁটি ঘিয়ের কদরই আলাদা। এটি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তেমনি খাবারের স্বাদ বর্ধকও বটে। এটা সেটা আরো টুকিটাকি গল্প চলতে লাগল। এইদিকে সুফিয়া আর তার ছেলের বউ এর মুখ টিপে টিপে হেঁসেই যাচ্ছিলেন।
এরপর খান সাহেব যে কয়দিন ছিলেন সে কয়দিনে পোলাও, বিরিয়ানি, হালুয়া সহ যত পদের রান্না হয়েছে তাতে দেয়া হয়েছিল সেই খাঁটি ঘি। শেষ যাতে না হয়ে যায় তাই খান সাহেবের ছেলের বউ স্বামীকে বলে তার অফিসের ঠিকানায় চুপিচুপি অর্ডার করেছিলেন আরও ঘি। খান সাহেব যার কিছুই জানেন না।
খান সাহেব যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন তার ছেলের বউ দুই কৌটা ঘি এনে বলল বাবা এই ঘি আপনার জন্য উপহার। খান সাহেব উপহার দেখে অবাক হয়ে বললেন এটা দিয়ে আমি কী করব মা? আমি তো ঘরে বানানো খাঁটি ঘি খাই। তখন ছেলের বউ বলল, বাবা এটাও খাঁটি ঘি’ই আর ঘরের মতই পরম যত্নে বানানো। তাছাড়া আপনি এই কয়দিন এই ঘি’ই খেয়েছেন। খান সাহেব যারপর নাই অবাক হলেন সব শুনে।
অগত্যা ঘিয়ের কৌটা হাতে নিয়ে দেখে বললেন, “সামনা- বিশুদ্ধ ঘি।” বউমা ঘি’টা আসলেই খাঁটি। আমি সারাজীবন খাঁটি ঘি খেয়ে এসেছি, একটু হেরফের হলে আমি নিশ্চই বুঝতাম। এখন থেকে এই ঘি’ই পাঠিয়ো আমার জন্য, তোমার শাশুড়ির বয়স হয়েছে তার খুব কষ্ট হয় ঘি বানাতে। স্বামীর মমতামাখা কথা শুনে সুফিয়া লজ্জায় আঁচলে মুখ ঢাকলেন। আর তা দেখে খান সাহব ও তার পুত্রবধু হেসে ফেললেন।