তেতুলের সস
-‘তোর মত একটা আস্ত বোবা কালা গম্ভীর টাইপ মানুষের কাছে জারির কেমন করে থাকে রে ভাইয়া? আমি তো পুরাই তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি!’ বলেই নাদিয়া উত্তরের অপেক্ষা না করে আম্মার দিকে তাকালো। যেন আম্মাকেও দলে ভিড়াতে চাচ্ছে।
– “আমিও মনে মনে ভাবছিলাম। এত চুপচাপ একটা মানুষের সাথে জারিরের মত অতি চঞ্চল খরগোশটার বন্ধুত্ব হল কি করে!” আম্মাও দেখি নাদিয়ার কথারই পুনরাবৃত্তি করল। আমি চুপ করেই আছি। অত্যন্ত বিরক্তও।
-‘আম্মা! তুমি জানো? জারির আমাকে পুরা দৌড়ের উপর রাখে। নিজের খেলনা নিয়ে খেলে না, সারাক্ষণ নতুন নতুন গল্প বলা চাই, আমার জিনিসপত্র উল্টেপাল্টে অস্থির করে মারে। আর ভাইয়ার কাছে এতটুকুন একটা ছেলে ভেজা বেড়াল হয়ে থাকে! ওর দিকে একবার তাকায় না পর্যন্ত ভাইয়া তবুও!’ গড়বড় করে বলে গেল নাদিয়া। হিংসুটে একটা।
আমি নিজেও অবশ্য একটু যে অবাক নই তা না। আমার সাথে কেউ মেশে না। আমারও এসব ঝামেলা ভাল লাগে না। নাদিয়া কথা বলতে আসলে কেন যেন নিজের অনিচ্ছাতেও খিঁচিয়ে উঠি। নাদিয়া আমাকে দেখতে পারে না।
কিন্তু জারির প্রতিদিন বিকেলে আসে। বেশ খানিকটা সময় থাকে। আমার সসে চারআঙুল চুবায়ে খায়। প্রচণ্ড বিরক্ত হই, কিছু বলতে পারি না । “বাইয়া, তুমাল সচ কুব মজা ” বলে এমন আন্তরিক মন গলানো হাসি দেয়, প্রশ্রয় না দিয়ে থাকা যায় না। এখন এদের সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আম্মাকে বললাম,
-‘আম্মা, বিকেলের নাস্তার সাথে সসের জন্য আলাদা ছোট্ট বাটি দিও তো ‘
কথা শেষ করতে দিল না নাদিয়া।
-‘কেন বাটি নিবি কেন ভাইয়া? সরাসরি বোতল থেকে ঢক ঢক করে খাবি। আমাকে দিবি না বলে নিজের ঘরে সসের বোতল নিয়ে রাখছিস, ছোটলোক একটা!’
-‘বাটি জারিরের জন্য। আমার জন্যে প্লেটে নেয়া সস সে মুহুর্তের মধ্যে শেষ করে ফেলে!’ কথা বাড়াতে ভাল লাগছে না। আজকাল বড্ড ঝগড়াটে হয়েছে নাদিয়া।
-‘আম্মা! জাবির কেন ভাইয়ার কাছে রোজ যায় বুঝেছো এবার? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম পুঁচকেটা চরম মাত্রার “সস খোর” একটা। তার উপর ভাইয়া এবার টামারহিন্দ আনিয়েছে কতগুলা। হুমম, এতক্ষণে বোঝা গেল আসল রহস্য। আমাকে খেতে দিবি না তো ? নে এবার ঠ্যালা সামলা। ‘ বলে ফিচকেলে একটা হাসি দিল নাদিয়া।
এ হচ্ছে টামারহিন্দ সস। এমন স্বাদ যে গম্ভীর ভাইয়া আর দুষ্টু ছো্ট্ট জাবিরেরও খাতির হয়ে যায় অনায়াসেই। কোন কথা হবে না। হবে শুধু টামারহিন্দ!