Awareness Blog

মুহাররম নিয়ে কিছু কথা…

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের জানিয়েছেন, ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই মাসসমূহের সংখ্যা হল বারো মাস। এর মধ্যে চারটি মাস হল নিষিদ্ধ (পবিত্র)। এটাই সরল বিধান। অতএব তোমরা এ মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি যুলুম করো না’ – (সূরা তাওবা: ৩৬)বছরে যে চারটি সম্মানিত মাস রয়েছে তার মধ্যে মুহাররম একটি যা হিজরি বছরের প্রথম মাস৷ জুলুম তথা অন্যায় ও পাপ কাজ নিষিদ্ধ সবসময়ের জন্য, তারপরও এই মাসগুলোতে আল্লাহ তা’আলা যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি, লুটতরাজ সহ যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিশেষভাবে বিরত থাকতে বলেছেন।

আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো আল্লাহর মাস মুহাররম’ (মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮২১)এছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এই মাসে বিশেষ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন। আশুরা তথা ১০ই মুহাররমে তিনি আমাদের রোজা রাখতে বলেছেন।

ইহুদী জাতিও দশ তারিখে রোজা রাখে বিধায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ১০ই মুহাররম এর পাশাপাশি এর আগের দিন বা পরের দিন অর্থাৎ ৯ অথবা ১১ মুহাররম রোজা রাখতে বলেছেন যাতে তাদের সাদৃশ্য না হয়। এই রোজার একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। চলুন হাদিসে দেখে আসি – ইবনু ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনাতে এলেন, তখন ইয়াহূদীগণ আশুরার দিন রোজা পালন করত। তারা জানাল, এ দিন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরআউন-এর উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সহাবীদের বললেন, মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হাকদার। কাজেই তোমরা রোজা রাখো। [সহী বুখারীঃ ২০০৪] ( ই.ফা. ৪৩২০) এ হিসেবে এটি বিজয়ের মাসও।

এ দিনে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল মূসা (আ) ও তাঁর সঙ্গী বনী ইসরাঈলকে ফির্আউনের হাত থেকে উদ্ধার করেন এবং ফির‘আউন ও তার সঙ্গীদেরকে ডুবিয়ে মারেন।আমরা সারাবছর ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কতশত’ই গুনাহ করে থাকি। মুহাররম তথা আশুরার রোজা এতই মর্যাদাপূর্ণ যে এটি বিগত একটি বছরের সমস্ত গুনাহ (সগীরা গুনাহ) মাফের ওয়াসিলা হতে পারে।

আমাদের দেশে এমন পন্থায় মুহাররম মাসে, আশুরা পালন করা হয় যার কোনো ভিত্তি কুরআন এবং হাদিসে পাওয়া যায় না। যেমন অনেকেই বছরের প্রথম দিন উদযাপন করেন। অনেকেই আশুরাকে চিনে থাকেন কারবালার দিনের মর্মান্তিক ঘটনার দিন হিসেবে৷ এই দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৌহিত্র এবং তার স্বজনরা নির্মম ভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। । এটা আমাদের জন্য কষ্টের। কিন্তু এই দিনকে ঘিরে নানানরকম উদ্ভট কাজ করা হয় যাতে সাওয়াব তো হয় না, বরং গুনাহর ভাগিদার হতে হয়। ।

বিশেষ করে তাজিয়া মিছিল করা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজেকে আহত করে রক্তাক্ত করা সবই নিষিদ্ধ কাজ। নিজেকে আঘাত করা কখনও ইবাদতের কাজ হতে পারে না। আবার, এই দিনে অনেকে বিশেষ নামাজের কথা বলেন বা বিশেষ খাবার তৈরি করেন – যার কোনো ভিত্তি নেই।আমরা তো কেবল সেসব আমলই করব যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন ।

তিনি আমাদের কাছে ইসলামকে পরিপূর্ণ ভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এতে নতুন করে কিছু যোগ করার সুযোগ নেই। মুহাররম মাস আল্লাহ তা’আলার কাছে সম্মানিত মাসসমূহের একটি। এই মাসে বেশি বেশি ভালো কাজে নিজেকে তথা প্রিয়জনদের উদ্বুদ্ধ করতে পারি। বেশি বেশি দান সাদাকাহ করতে পারি৷ ফরজ আমল না ছাড়ার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে সকল গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি। তাহলেই এই সন্মানিত মাসের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে, যা আমাদের পরবর্তি মাসগুলোতে আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে ইন শা আল্লাহ।