মধু ! এক বিস্ময়কর পানীয়
মধু ! শুধুই এক বিস্ময়কর পানীয় নয় । এটি এক বিস্ময়কর প্রাকৃতিক উপাদান। সুদূর অতীত থেকেই একে খাদ্য, পানীয় বা জটিল রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের জাতীয় মধু বোর্ডের সংজ্ঞা অনুযায়ী, “মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ, যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টিকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাই।”
সাধারণভাবে এটি পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আধুনিক ফার্মাকোলজিক্যাল গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মধু হৃদ-পেশির কার্যক্রম বাড়িয়ে রক্তনালী প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং পেশির কার্যক্রম স্বাভাবিক করে রোগ প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কলা সুদৃঢ় করে।
অনেকের মতে, মধু এক প্রকার ওষুধ, আর এর রয়েছে পচননিবারক (অ্যান্টিসেপটিক) এবং কোলেস্টেরল ও ব্যাকটেরিয়াবিরোধী ধর্ম।
একটি গবেষণায় জানা যায়, এটি নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ও আমাশয়ের জন্য দায়ী জীবাণু ধ্বংস করতে পারে।
ইউনানি চিকিৎসকেরা বিভিন্ন রোগে মধু ব্যবহার করেন। যেমনঃ পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্লাধিক্য, মুখের প্রদাহ, চোখের বিভিন্ন রোগ, স্নায়ুরোগ, রক্তপ্রবাহের অবরুদ্ধতাজনিত হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের বিভিন্ন রোগ ইত্যাদি।
মধু সর্দি, কাশি, টাইফয়েড, জ্বর, নিউমোনিয়া ও আমাশয়ে উপকারী।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে মধুর গুণাগুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
মধু সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং তোমার প্রতিপালক মধুমক্ষিকাকে প্রত্যাদেশ করেছেন যে, পর্বতমালা ও বৃক্ষসমূহ এবং উচ্চ স্থানে মধুচক্র নির্মাণ করো। তাদের উদর থেকে বিবিধ বর্ণবিশিষ্ট পানীয় নির্গত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে মানব সমাজের জন্য নিরাময় রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সমাজের জন্য (আল্লাহর কুদরতের) নিদর্শন রয়েছে।’ সূরা নহল : ৬৮ ও ৬৯ আয়াত।
মহানবী সা:-এর মতে, সব পানীয় উপাদানের মধ্যে মধু সর্বোৎকৃষ্ট।
গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটস বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে মধু ব্যবহার করতেন। তিনি মধুকে অতিরিক্ত খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করারও পরামর্শ দেন। কারণ এটি খাদ্যমান বাড়ায়।
গ্যালেন মধুর ঔষধি গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন। তিনি এর বিষবিরোধী ধর্মও উল্লেখ করেছেন। তার মতে, মধু আন্ত্রিক রোগে উপকারী।
খ্যাতিমান চিকিৎসক ইবনে সিনা, আনতাকি ও ইবনুল আল-বায়তার মধুর ঔষধি গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, মধু শরীরের বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। এটি ক্ষুধা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং শোষক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এক নজরে দেখে নেই মধুর উপাদানগুলোঃ
মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পুষ্টিমান, যা মানবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। রাসায়নিক পরীক্ষায় জানা যায়, এতে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও ভিটামিন।
উইকিপিডিয়ার তথ্যনুসারে, মধুতে নিন্মলিখিত উপাদানগুলো পাওয়া যায়।
- ফ্রুক্টোজঃ ৩৮.২%
- গ্লুকোজঃ ৩১.৩%
- মল্টোজঃ ৭.১%
- সুক্রোজঃ ১.৩%
- পানিঃ ১৭.২%
- ম্যাল্টোডেক্সট্রিনঃ ১.৫%
- ছাইঃ ০.২%
- অন্যান্যঃ ৩.২%
১০০ গ্রাম মধুতে থাকে-
- শক্তিঃ ৩০৪ কিলোক্যালরি বা ১২৭২ কিলোজুল।
- কার্বোহাইড্রেটঃ ৮২.৪ গ্রাম ( চিনি ৮২.১২ গ্রাম, ডায়েট্রি ফাইবার ০.২ গ্রাম)
এতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এনজাইম ২ শতাংশ এবং মানবদেহের কোষকলা, অঙ্গ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান থাকে। এ এনজাইমগুলো হচ্ছেঃ ডায়াস্টেজ, ইনভার্টেজ, সেকারোজ, ক্যাটালেক্স, পার-অক্সিডেজ, লাইপেজ।
এনজাইমগুলো বিভিন্ন কালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্লোরিন, সালফার, ফসফরাস, আয়োডিন লবণের সাথে যুক্ত থাকে। কিছু উপকরণে রেডিয়ামের মতো ধাতব উপাদানও থাকে।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, এতে অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড, টিন, জিংক ও জৈব এসিড (যেমনঃ ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক এসিড, অ্যাক্সালিক এসিড), কয়েক প্রকার ভিটামিন, প্রোটিন, হরমোন, এসিটাইল কোলিন, অ্যান্টি-বায়োটিক্স, ফাইটোনসাইডস, সাইটোস্ট্যাটিক্স এবং পানি (১৭ দশমিক ৭ শতাংশ) ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান আছে।
ভিটামিন যেমনঃ ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে এবং ক্যারোটিন বা ভিটামিন-এ মধুতে বিদ্যমান।